মানুষ হত্যা করা খুবই জঘন্য ও ভয়ানক কাজ, আর মানুষের মধ্যে যদি কেউ মুমিন হয় তাহলে তো কথাই নেই। অনেকে ইয়াজিদ লা’য়নাতুল্লাহকে কাফের বলতে চায়না, অনেকে এড়িয়ে যায়, অনেকে আবার বলে আমার মাজহাবের ইমাম তো কাফের ফাতওয়া দেন নাই আমিও আমার ইমামের অনুসরণ করি। প্রথমতো কোন ইমাম এই মর্মে ফাতওয়া জারিই করেন নি যে ইয়াজিদ লানতুল্লাহকে কাফের বলা যাবেনা, বরং কেউ যদি মনে করে কাফের তাহলে সে কাফের বলুক।
ইমাম হুসেইন য়ালাইহিছ ছালামের হত্যার সাথে জড়িতদের, নির্দেশদাতাকে যদি কেউ অপরাধি না মনে করে, লা’য়নাতুল্লাহ না মনে করে, কুফরে লিপ্ত না মনে করে তাহলে তাকে হেদায়েতের দায়িত্ব আমার নয়। একজন সাধারণ আউলিয়ার প্রতি বিদ্বেষ রাখনে ওয়ালার ব্যপারে হাদিছে কুদছিতে যা বলা হয়েছে তা হলোঃ (إِنَّ اللَّهَ قَالَ مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ،) “মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যে ব্যক্তি আমার কোন ওলীর/বন্ধুর সঙ্গে দুশমনি করবে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করব। (বুখারি শরীফ ৬৫০২) এই হলো অবস্থা, একেবারে সর্বনিম্ন আউলিয়ার মর্যাদা হলো যে কোন ঈমানদার মুছলিম ও যদি উনার অলি হওয়ার ব্যাপারে কনফার্ম হয়ে যায় আর জেনেও বিদ্বেষ পোষণ করে আর এর উপর মৃত্যু ও হয় তাহলে উক্ত হাদিছ শরীফ অনুসারে সে ফেরাউনের কায়িম মাক্বাম হয়ে যাচ্ছে, ভাবা যায় মহান আল্লাহ পাক যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন সে কি ঈমান নিয়ে মারা যাবে? এখন ইয়াজিদ প্রেমিরা কি নাওয়াছায়ে রছুল, আওলাদে রছুল, আহলে বাইত, ছ্বাহাবী, লখতে যিগরে মাওলা হযরত আলী য়ালাইহিছ ছালাম ও ফাতেমা য়ালাইহাছ ছালামকে অলিদের কাতারে মনে করেনা?
অথচ হাদিছ শরীফ স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে, (قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى ٱللّٰهُ عَلَيْهِ وَ اٰلِهِ وَسَلَّمَ" مَنْ أَحَبَّ الْحَسَنَ وَالْحُسَيْنَ فَقَدْ أَحَبَّنِي وَمَنْ أَبْغَضَهُمَا فَقَدْ أَبْغَضَنِي) আবূ হুরায়রা রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হাছান ও হুছাইনকে মুহব্বত করে, সে (মূলত) আমাকেই মুহব্বত করে আর যে ব্যাক্তি তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে সে আমার প্রতিই বিদ্বেষ পোষণ করে। (ইবনে মাজাহ শরীফ ১৪৩) জানার বিষয় হলো হুসেইন য়ালাইহিছ ছালাম বিদ্বেষী ইয়াজিদ লানতুল্লাহ রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম কে ঘৃণা করার পরেও কীভাবে মুছলমান থাকে?
রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম আরো বলেছেনঃ (هَذَانِ ابْنَاىَ وَابْنَا ابْنَتِي اللَّهُمَّ إِنِّي أُحِبُّهُمَا فَأَحِبَّهُمَا وَأَحِبَّ مَنْ يُحِبُّهُمَا) উসামাহ্ ইবনু যাইদ রদ্বিআল্লাহু আনহু বলেন, এক রাতে আমি আমার কোন এক দরকারে রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লামের কাছে গেলাম। অতএব রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম এমন অবস্থায় বাইরে এলেন যে, একটা কিছু উনার পিঠে জড়ানো ছিল যা আমি অবগত ছিলাম না। আমি আমার দরকার সেরে অবসর হয়ে প্রশ্ন করলাম, আপনার দেহের সঙ্গে জড়ানো এটা কি? তিনি পরিধেয় বস্ত্র উম্মুক্ত করলে দেখা গেল উনার দুই কোলে হাসান ও হুসাইন য়ালাইহিমাছ ছালাম। তিনি বললেনঃ এরা দু’জন আমার আওলাদ এবং আমার কন্যার ছেলে। হে মহান আল্লাহ তায়ালা! আমি এদের দু’জনকে মুহব্বত করি, সুতরাং আপনিও তাদেরকে মুহব্বত করুন, এবং যে ব্যক্তি এদেরকে মুহব্বত করবে, আপনি তাদেরকেও মুহব্বত করবেন। (তিরমিযি শরীফ ৩৭৬৯) উক্ত হাদিছ শরীফ অনুসারে একজন সূফী সারা জীবন আমল করেও সে আল্লাহ তায়ালা উনার মুহব্বত হাছিল করতে পারবে কিনা জানা নাই, তবে কেউ হাক্বিকি মুহব্বত করে আশিকে হুসেইন হলে সে যে আল্লাহ পাক উনাকে তার প্রতি মুহব্বত করনে ওয়ালা পাবে এটার গ্যারান্টি মিলছে। জাহিল ব্যতীত সবাই এই সিম্পল জিনিষ বোঝবে।
ইয়াজিদ লা’য়নাতুল্লার শাসনামল ছিলো সম্মানিত দ্বীন ইছলামের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। তার শাসনামলে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতে। সম্মানিত দ্বীন ইছলামের মূল শিক্ষার সঙ্গে তার অনেক কাজ সাংঘর্ষিক বলে বিবেচিত হয়ে আছে ইতিহাসের পাতায়। নীচে তার শাসনামলের কয়েকটি প্রধান ঘটনার তথ্য দেওয়া হলোঃ
১. ইমাম হুসেইন য়ালাইহিছ ছালামের শাহাদাতঃ কারবালার ঘটনায় ইয়াজিদের শাসনের সরাসরি প্রভাব ছিল। ইমাম হুসেইন য়ালাইহিছ ছালাম, ইয়াজিদের প্রতি আনুগত্য অস্বীকার করেন, কারণ ইয়াজিদের চরিত্র এবং তার শাসন ব্যবস্থাকে তিনি ইসলামি নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে করতেন। এই কারণেই মূলত ইমাম হুসেইন য়ালাইহিছ ছালামের এবং সকল আহলে বাইত শরীফ য়ালাইহিমুছ ছালাম কারবালার প্রান্তরে নির্মমভাবে শহীদ হন। ইয়াজিদ বাহিনীর প্রধানেরা সরাসরি ইমাম হুসেইন য়ালাইহিছ ছালামের হত্যার সাথে জড়িত এবং এইসব হত্যাকারীদের ইয়াজিদ লা’য়নাতুল্লার হুব্বে হুসেইন প্রকাশে শাস্তি দেয়নি তাই এই হত্যাকাণ্ডের দায় সে এড়াতে পারে না। একজন শাসক এর হুকুম হলো মূল যেকোন হত্যার ব্যপারে, জল্লাদ হত্যাকারী হয়না, হত্যাকারী হয় কাজির হুকুম।
২. মদিনা শরীফে আক্রমণ, “হাররার যুদ্ধঃ” ৬৩ হিজরিতে ইয়াজিদের সেনাবাহিনী মদিনা শরীফে আক্রমণ চালায়, যা “হাররা” নামে পরিচিত। এই আক্রমণে ইয়াজিদের সেনারা মদিনা শরীফের অধিবাসীদের নির্বিচারে হত্যা করে এবং শহর লুটপাট করে, যুবতী মেয়েদের ধর্ষণ করে, এই পরিমাণে যে পরে সেইসব যুবতিদের অনেকেই জারজ সন্তান জন্ম দেন যাদের কোন পিতৃ পরিচয় ছিলোনা। মদিনা শরীফের পবিত্রতা লঙ্ঘিত হয়, এবং রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লামের পরিবারের অনেক সদস্য এবং ছ্বহাবাগণের বংশধরদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়।
অথচ রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম মদিনা শরীফের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং এই শহরের পবিত্রতা রক্ষার উপর জোর দিয়েছেন, একে বাইতুল্লাহ শরীফের মতো হারাম শরীফ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তাই, মদিনা শরীফে এই আক্রমণ ইয়াজিদের শাসনের একটি কালো অধ্যায়। যারা ইয়াজিদ লা’য়নাতুল্লাকে মুহব্বত করে তাদের জিজ্ঞাসা করি যদি আজ কোন মুছলিম শাসক মদিনা শরীফে হামলা করে লুটপাট করে, যুবতী পর্দাশিল মা বোনদেরকে ধর্ষণ করে তাহলে কি তাকে মুছলিম মেনে নেবে?
৩. কাবা শরীফ ধ্বংসের চেষ্টাঃ ৬৪ হিজরিতে মক্কায় ইয়াজিদের সেনাপতি ইবনে নামির নেতৃত্বে কাবা শরীফের উপর আক্রমণ চালানো হয়। সেনারা মক্কা শরীফে পাথর নিক্ষেপ করার জন্য আগুনে গরম করা পাথর ব্যবহার করে, যা কাবা শরীফের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে বড় একটি কলঙ্ক হিসেবে দেখা হয়।
৪. মদ্যপান ও অনৈতিক জীবনযাপনঃ ইতিহাসে ইয়াজিদের চরিত্র সম্পর্কে বিভিন্ন দলিল পাওয়া যায়। অধিকাংশ নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় উল্লেখ আছে যে, ইয়াজিদ মদ্যপান করতো, গান-বাজনা এবং অসচ্চরিত্র কাজে লিপ্ত ছিল। ইমাম সিফফিন, তাবারি এবং ইবনে কাসির রহমতুল্লাহী য়ালাইহিমগনের মতো ইতিহাসবিদরা তার এধরনের অনৈতিক জীবনযাপন সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন।
এবার দেখি হত্যার ব্যপারে মহান আল্লাহ পাক তিনি কি বলেন?
সরকার বা শাসনব্যবস্থায় কর্তৃত্ব পেলেই কি নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা যাবে? মোটেও না মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ (فَهَلۡ عَسَیۡتُمۡ اِنۡ تَوَلَّیۡتُمۡ اَنۡ تُفۡسِدُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ تُقَطِّعُوۡۤا اَرۡحَامَكُمۡ اُولٰٓئِكَ الَّذِیۡنَ لَعَنَهُمُ اللّٰهُ فَاَصَمَّهُمۡ وَ اَعۡمٰۤی اَبۡصَارَهُمۡ) তোমাদের কাছ থেকে এর চাইতে বেশী কি প্রত্যাশা করা যাবে যে, তোমরা (একবার) যদি (জমিনে) শাসন ক্ষমতায় বসতে পারো তাহলে (মহান আল্লাহ তায়ালা উনার) যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং যাবতীয় আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে ফেলবে। (মূলত) এরাই হচ্ছে সে সব মানুষ, যাদের ওপর মহান আল্লাহ তা’য়ালা লানত দিয়েছেন, (এছাড়াও, তিনি তাদের) বোবাও করে দিয়েছেন (তাই তারা সত্য কথা বলতে পারে না) এবং তাদের তিনি অন্ধও করে দিয়েছেন (তাই তারা সত্য কি তা দেখতেও পায় না)। (আল কুরআন ৪৭/২২-২৩)
নিরপরাধ মানুষকে হত্যাকারী, গণহত্যার হুকুমদাতা খুনীদের গডফাদারদের সেই যেই হোক, কেবল দুনিয়াতেই নয়, বরং তাদের আখেরাত ও বরবাদ হয়ে যায়, যেমনঃ মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (وَّ یَقۡتُلُوۡنَ الَّذِیۡنَ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡقِسۡطِ مِنَ النَّاسِ ۙ فَبَشِّرۡهُمۡ بِعَذَابٍ اَلِیۡمٍ اُولٰٓئِكَ الَّذِیۡنَ حَبِطَتۡ اَعۡمَالُهُمۡ فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ ۫ وَ مَا لَهُمۡ مِّنۡ نّٰصِرِیۡنَ) আর মানুষের মধ্য থেকে যারা ন্যায়-পরায়ণতার নির্দেশ দেয় তাদেরকে (যারা) হত্যা করে, (পেয়ারে হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম) আপনি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন। এরাই হচ্ছে তারা যাদের সমস্ত (নেক) আমল দুনিয়া ও আখেরাতে বরবাদ হয়ে যাবে এবং (সেদিন) তাদের কোন সাহায্যকারীও থাকবেনা। (আল কুরআন ৩/২১-২২)
মহান আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেনঃ (وَمَنْ يَّقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيْهَا وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيْمًا) আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন মু’মিনকে হত্যা করে তার শাস্তি হবে জাহান্নাম, তার মধ্যে সে সারাজীবন থাকবে এবং মহান আল্লাহ্ তা‘য়ালা সেই লোকের প্রতি ক্রুদ্ধ হবেন ও তাকে লানত প্রদান করবেন। এছাড়াও তিনি তার জন্য প্রস্ত্তত করে রেখেছেন মর্মন্ধুত শাস্তি। (আন নিছা ৪/৯৩)
(مَنۡ قَتَلَ نَفۡسًۢا بِغَیۡرِ نَفۡسٍ اَوۡ فَسَادٍ فِی الۡاَرۡضِ فَكَاَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِیۡعًا ؕ وَ مَنۡ اَحۡیَاهَا فَكَاَنَّمَاۤ اَحۡیَا النَّاسَ جَمِیۡعًا) যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে হত্যার বিনিময়ে অথবা ভূপৃষ্ঠে ফাসাদ সৃষ্টির কারণ ছাড়া অন্যায়ভাবে হত্যা করলো সে যেন সকল মানুষকেই হত্যা করলো। আর যে ব্যক্তি কাউকে অবৈধ হত্যাকান্ড থেকে রক্ষা করলো সে যেন সকল মানুষকেই রক্ষা করলো’’। (আল মা’য়িদাহ শরীফ ৫/৩২)
আর এই ধরণের হত্যাকান্ডকে হাদীসের পরিভাষায় সর্ববৃহৎ গুনাহ্ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমন আনাস বিন মালিক রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেনঃ (أَكْبَرُ الْكَبَائِرِ: الْإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَقَتْلُ النَّفْسِ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ، وَقَوْلُ الزُّوْرِ، أَوْ قَالَ: وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ) সর্ববৃহৎ কবীরা গুনাহ্ হচ্ছে চারটি, মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা উনার সাথে কাউকে শরীক করা, কোন ব্যক্তিকে অবৈধভাবে হত্যা করা, (মুমিন) মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা সাক্ষী দেয়া’’। (বুখারী শরীফ ৬৮৭১; মুসলিম শরীফ ৮৮)
তাছাড়া এখন দলিল হিসেবে যা যুক্ত করবো হাদিছ শরীফ থেকে সেই হাদিছ শরীফগুলোতে হত্যাকান্ডের ভয়াবহতা ও ভয়ঙ্করতা আরো সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ তা’য়ালার নিকট ইচ্ছাকৃত হত্যাকারীর ক্ষমার আশা খুবই ক্ষীণ। কেননা রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম বলেনঃ (سَمِعْتُ مُعَاوِيَةَ، يَخْطُبُ - وَكَانَ قَلِيلَ الْحَدِيثِ - عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى ٱللّٰهُ عَلَيْهِ وَ اٰلِهِ وَسَلَّمَ قَالَ سَمِعْتُهُ يَخْطُبُ يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " كُلُّ ذَنْبٍ عَسَى اللَّهُ أَنْ يَغْفِرَهُ إِلاَّ الرَّجُلُ يَقْتُلُ الْمُؤْمِنَ مُتَعَمِّدًا أَوِ الرَّجُلُ يَمُوتُ كَافِرًا) প্রতিটি গুনাহ্ আশা করা যায় যে, মহান আল্লাহ্ তা‘আলা তা ক্ষমা করে দিবেন। তবে দু’টি গুনাহ্ যা আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমা করবেন না। আর তা হচ্ছে, কোন মানুষ কাফির অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে অথবা ইচ্ছাকৃত কেউ কোন মু’মিনকে হত্যা করলে। (নাসাঈ শরীফ ৩৯৮৪; মুছনাদে আহমাদ ১৬৯০৭; হাকিম ৪/৩৫১)
এতো গেলো অন্যকে হত্যার ব্যাপারে, অথচ আপন সন্তান ও যদি কোন মহিলার গর্ভ ধারণের চার মাস পর দরিদ্রতার ভয়ে তার গর্ভপাত করানোরই হুকুম নাই, কেননা কাউকে অবৈধভাবে হত্যা করার শামিল। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ (قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى ٱللّٰهُ عَلَيْهِ وَ اٰلِهِ وَسَلَّمَ أَيُّ الذَّنْبِ أَكْبَرُ عِنْدَ اللهِ؟ قَالَ: أَنْ تَدْعُوَ لِلهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ، قَالَ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: أَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ خَشْيَةَ أَنْ يَّطْعَمَ مَعَكَ، قَالَ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: أَنْ تُزَانِيَ بِحَلِيْلَةِ جَارِكَ) জনৈক ব্যক্তি রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলো, ইয়া রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম! কোন পাপটি মহান আল্লাহ্ তা’য়ালার নিকট মহাপাপ বলে বিবেচিত? রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম বললেন, মহান আল্লাহ তা’য়ালার সাথে কাউকে শরীক করা; অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। সে বললোঃ অতঃপর কি? তিনি বললেনঃ নিজ সন্তানকে (গর্ভে থাকা অবস্থায়) হত্যা করা ভবিষ্যতে তোমার সঙ্গে খাবে বলে। (বুখারী শরীফ ৪৪৭৭, ৪৭৬১, ৬০০১, ৬৮১১, ৬৮৬১, ৭৫২০, ৭৫৩২; মুসলিম শরীফ ৮৬) এই হাদিছ শরীফের মূল হুকুম কালামুল্লাহ শরীফে পাওয়া যায়, যেখানে মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি বলেনঃ (وَ لَا تَقۡتُلُوۡۤا اَوۡلَادَكُمۡ خَشۡیَۃَ اِمۡلَاقٍ ؕ نَحۡنُ نَرۡزُقُهُمۡ وَ اِیَّاكُمۡ ؕ اِنَّ قَتۡلَهُمۡ كَانَ خِطۡاً كَبِیۡرًا) দরিদ্রতার ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে (ভ্রুনেই) হত্যা করো না। (ভুলে যেওনা) তোমাদের ও তাদের রিযিকদাতা (কেবল) আমিই, (একারণে দরিদ্রতার ভয়ে) তাদের হত্যা করা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। (ছুরাহ আল ইসরা ১৭/৩১ ও আল আন’আম ৬/১৫১) এখন আপন পিতামাতা ভ্রুনেই যেখানে সন্তানকে হত্যার অধিকার পাচ্ছেনা, সেখানে জলজ্যান্ত নিরপরাধ মানুষকে হত্যার কোন সুযোগই নাই, না এর আছে কোন ক্ষমার সুযোগ।
এই ব্যপারে হাদিছ শরীফে এসেছেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেনঃ (عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى ٱللّٰهُ عَلَيْهِ وَ اٰلِهِ وَسَلَّمَ قَالَ " يَجِيءُ الْمَقْتُولُ بِالْقَاتِلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ نَاصِيَتُهُ وَرَأْسُهُ بِيَدِهِ وَأَوْدَاجُهُ تَشْخُبُ دَمًا يَقُولُ يَا رَبِّ هَذَا قَتَلَنِي حَتَّى يُدْنِيَهُ مِنَ الْعَرْشِ " . قَالَ فَذَكَرُوا لاِبْنِ عَبَّاسٍ التَّوْبَةَ فَتَلاَ هَذِهِ الآيَةََ: (وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهُ جَهَبَّمُ) قَالَ وَمَا نُسِخَتْ هَذِهِ الآيَةُ وَلاَ بُدِّلَتْ وَأَنَّى لَهُ التَّوْبَةُ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ وَقَدْ رَوَى بَعْضُهُمْ هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ نَحْوَهُ وَلَمْ يَرْفَعْهُ) হত্যাকৃত ব্যক্তি হত্যাকারীকে সঙ্গে নিয়ে কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তা‘য়ালার সামনে উপস্থিত হবে। হত্যাকৃত ব্যক্তির মাথা তার হাতেই থাকবে। শিরাগুলো থেকে তখন রক্ত পড়বে। সে মহান আল্লাহ তা‘আলাকে উদ্দেশ্য করে বলবেঃ হে আমার প্রভু! এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। এমনকি সে হত্যাকারীকে আরশের অতি নিকটেই নিয়ে যাবে। শ্রোতারা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিআল্লাহু আনহুকে উক্ত হত্যাকারীর তাওবা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উপরোক্ত সূরাহ নিসা’র আয়াত শরীফটি তিলাওয়াত করে বললেনঃ উক্ত আয়াত রহিত হয়নি। পরিবর্তনও হয়নি। অতএব তার তাওবা কোন কাজেই আসবে না। (তিরমিযী শরীফ ৩০২৯; ইব্নু মাজাহ্ শরীফ ২৬৭০; নাসায়ী শরীফ ৪৮৬৬)
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেনঃ (عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ قَالَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى ٱللّٰهُ عَلَيْهِ وَ اٰلِهِ وَسَلَّمَ" لَنْ يَزَالَ الْمُؤْمِنُ فِي فُسْحَةٍ مِنْ دِينِهِ، مَا لَمْ يُصِبْ دَمًا حَرَامًا) মু’মিন ব্যক্তি সর্বদা ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা ভোগ করবে যতক্ষণ না সে কোন অবৈধ রক্তপাত করবে। (বুখারী শরীফ ৬৮৬২)
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেনঃ (عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى ٱللّٰهُ عَلَيْهِ وَ اٰلِهِ وَسَلَّمَ إِنَّ مِنْ وَرْطَاتِ الأُمُورِ الَّتِي لاَ مَخْرَجَ لِمَنْ أَوْقَعَ نَفْسَهُ فِيهَا، سَفْكَ الدَّمِ الْحَرَامِ بِغَيْرِ حِلِّهِ) এমন ঝামেলা যা থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই তা হচ্ছে অবৈধভাবে কারোর রক্তপাত করা (অর্থাৎ কাউকে হত্যা করা বিনা অপরাধে)। (বুখারী শরীফ ৬৮৬৩)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাস্ঊদ রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেনঃ (عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى ٱللّٰهُ عَلَيْهِ وَ اٰلِهِ وَسَلَّمَ أَوَّلُ مَا يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِي الدِّمَاءِ) কিয়ামতের দিন মানবাধিকার সম্পর্কিত সর্বপ্রথম হিসেব হবে রক্তের। (বুখারী শরীফ ৬৫৩৩, ৬৮৬৪; মুসলিম শরীফ ১৬৭৮; ইব্নু মাজাহ্ শরীফ ২৬৬৪, ২৬৬৬, নাসাঈ শরীফ ৩৯৯৪)
আবূ সা’ঈদ খুদরী রদ্বিআল্লাহু আনহু ও আবূ হুরায়রাহ রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত উনারা বলেনঃ রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেনঃ (أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ، وَأَبَا، هُرَيْرَةَ يَذْكُرَانِ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى ٱللّٰهُ عَلَيْهِ وَ اٰلِهِ وَسَلَّمَ قَالَ " لَوْ أَنَّ أَهْلَ السَّمَاءِ وَأَهْلَ الأَرْضِ اشْتَرَكُوا فِي دَمِ مُؤْمِنٍ لأَكَبَّهُمُ اللَّهُ فِي النَّارِ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ . وَأَبُو الْحَكَمِ الْبَجَلِيُّ هُوَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي نُعْمٍ الْكُوفِيُّ) যদি আসমান ও জমিনের সকলে (মাখলুক) মিলেও কোন মু’মিন হত্যায় অংশ গ্রহণ করে তবুও মহান আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকলকে মুখ থুবড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (তিরমিযী শরীফ ১৩৯৮)
মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (وَ لَا تَقۡتُلُوۡۤا اَنۡفُسَكُمۡ) আর তোমরা একে অন্যকে হত্যা করো না। (কুরআন ৪/২৯) আর জারীর বিন আব্দুল্লাহ আল-বাজালী, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আবূ বাক্রাহ রদ্বিআল্লাহু আনহুমাদের থেকে বর্ণিত উনারা বলেন, বিদায় হাজ্জের সময় রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম আমাকে বললেনঃ (عَنْ جَرِيرٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى ٱللّٰهُ عَلَيْهِ وَ اٰلِهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهُ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ " اسْتَنْصِتِ النَّاسَ " فَقَالَ " لاَ تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ) তুমি লোকদেরকে চুপ করিয়ে দাও, তারপর তিনি বললেনঃ ‘আমার পরে তোমরা একে অপরের গর্দান কাটাকাটি করে কাফির (এর মত) হয়ে যেও না। (বুখারী শরীফ ১২১, ১৭৩৯, ৪৪০৫, ৬১৬৬, ৬৭৮৫, ৬৮৬৮, ৬৮৬৯, ৭০৮০; মুসলিম শরীফ ৬৫, ৬৬, ১৬৭৯)
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেনঃ (عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى ٱللّٰهُ عَلَيْهِ وَ اٰلِهِ وَسَلَّمَ قَالَ" لَزَوَالُ الدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللَّهِ مِنْ قَتْلِ رَجُلٍ مُسْلِمٍ) মহান আল্লাহ তা‘য়ালার নিকট একজন মুসলিমকে হত্যা করার চেয়ে পুরো দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাওয়া অধিকতর সহজ’’। (তিরমিযী শরীফ ১৩৯৫; নাসাঈ শরীফ ৩৯৮৭; ইব্নু মাজাহ শরীফ ২৬৬৮)
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেন, রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেনঃ (عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو ـ رضى الله عنهما ـ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى ٱللّٰهُ عَلَيْهِ وَ اٰلِهِ وَسَلَّمَ قَالَ " مَنْ قَتَلَ مُعَاهَدًا لَمْ يَرَحْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ، وَإِنَّ رِيحَهَا تُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ أَرْبَعِينَ عَامًا) যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ কোন কাফিরকে হত্যা করলো সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না; অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ চল্লিশ বছরের রাস্তার দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়। (বুখারী শরীফ ৩১৬৬, ৬৯১৪; ইব্নু মাজাহ্ শরীফ ২৬৮৬)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লামকে কাবা ঘর তাওয়াফ করতে দেখলাম এবং তিনি বলছিলেনঃ (حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ، قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صَلَّى ٱللّٰهُ عَلَيْهِ وَ اٰلِهِ وَسَلَّمَ ـ يَطُوفُ بِالْكَعْبَةِ وَيَقُولُ " مَا أَطْيَبَكِ وَأَطْيَبَ رِيحَكِ مَا أَعْظَمَكِ وَأَعْظَمَ حُرْمَتَكِ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَحُرْمَةُ الْمُؤْمِنِ أَعْظَمُ عِنْدَ اللَّهِ حُرْمَةً مِنْكِ مَالِهِ وَدَمِهِ وَأَنْ نَظُنَّ بِهِ إِلاَّ خَيْرًا) কত উত্তম আপনি হে কাবা! আকর্ষণীয় আপনার খুশবু, কত উচ্চ মর্যাদা আপনার (হে কাবা)! কত মহান সম্মানের অধিকারী আপনি। সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ!, মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিকট মুমিন ব্যক্তির জান-মাল ও ইজ্জতের মর্যাদা আপনার চেয়ে অনেক বেশী। আমরা মুমিন ব্যক্তি সম্পর্কে সুধারণাই পোষণ করি। (তিরমিযী ২০৩২, ইব্নু হিববান ৫৭৬৩, ইবনে মাজাহ শরীফ ৩৯৩২)
অতএব ইয়াজিদ ও তার বাহিনীর যারা এই হত্যাযজ্ঞে জড়িত, যারা মনেপ্রাণে এই হত্যাগুলিকে সমর্থন করে, যায়েজ মনে করে, তারা সবাই মুর্তাদ, এদের বিয়ে বাতিল, স্ত্রীর/স্বামীর সাথে মিলিত হলে জিনা হবে, সন্তান জন্মালে তা হবে জারজ, কেননা তারা কুফুরি করেছে। হাদিছ শরীফে এসেছেনঃ “আব্দুল্লাহ ইবনে মাস্ঊদ রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিছে, “রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেনঃ কোন মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকি এবং তাকে হত্যা করা কুফরি। (বুখারী শরীফ ৪৮, মুসলিম শরীফ ৬৪) আর আয়াতে পাকে স্পষ্ট বলা হয়েছেঃ (وَمَنْ يَّقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيْهَا وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيْمًا) আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন মু’মিনকে হত্যা করে তার শাস্তি হবে জাহান্নাম, তার মধ্যে সে সারাজীবন থাকবে এবং মহান আল্লাহ্ তা‘য়ালা সেই লোকের প্রতি ক্রুদ্ধ হবেন ও তাকে লানত প্রদান করবেন। এছাড়াও তিনি তার জন্য প্রস্ত্তত করে রেখেছেন মর্মন্ধুত শাস্তি’’। (আন নিছা ৪/৯৩) উক্ত আয়াত শরীফে ৪ শাস্তি হত্যাকারীর ব্যপারে মহান আল্লাহ পাক উল্লেখ করেছেন, যেখানে প্রথমেই যাহান্নামের বাসিন্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছেন, এরপর বলেছেন, হত্যাকারী সেই জাহান্নামে সারাজীবন থাকবে, এরপর বলেছেন গজবনাক হবেন এবং ভয়ানক আযাবের ব্যবস্থাও করে রেখেছেন।
প্রত্যেক জামানার স্বৈরাচারীরা মনে করে যে হত্যা কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত, তাওবা করলেই মাফ পেয়ে যাবে অথচ আমরা দেখেছি যে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিআল্লাহু আনহুর মুখনিঃসৃত হাদিছ শরীফে তিনি বলেছেন হত্যাকারীর তাওবা কবুল হয়না, তাহলে বোঝা গেলো যে ইহা কবিরা গুনাহের চেয়েও অনেক উপরের বিষয়। তাছাড়া আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বিদাহ হলেন কবিরা গুনাহ দ্বারা ইনছান কাফের হয়না, আর কবিরাহ গুনাহ ইনছানকে সারাজীবন জাহান্নামে রাখার মতো কারণের অন্তর্ভুক্ত ও নয়। তাহলে উক্ত আয়াত শরীফের জাহির তো জানলাম, বাতিনের ব্যপারে ইমামগণের মত কি?
মহান আল্লাহ পাক তিনি তো স্পষ্ট করেই আল কুরআনে বলে দিয়েছেন, হত্যা, গণহত্যাকারী চিরস্থায়ী যাহান্নামী, এর মানে কি? এর মানে হলো যে ব্যক্তি, গোত্র মিলে কোন মুছলিমকে হত্যা করবে তার ক্বলব থেকে কলিমা শরীফ সরাই দেওয়া হবে, অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বে সে কাফের হয়ে মরবে, কারণ যত বড় গুনাহগার হোক, জররা পরিমাণ ঈমান তার মধ্যে থাকলে সে জাহান্নামে চিরজীবন থাকবেনা, একারণেই আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিআল্লাহু বলেছেন হত্যা, গণহত্যাকারীর তাওবা কবুল হবেনা কারণ তাওবা কবুল হলে সে জাহান্নামে চিরস্থায়ী থাকবেনা, একারণেই প্রথমদিকেই হাদিছ শরীফ উল্লেখ করা হয়েছে যে মুছলিমকে হত্যা করা কুফরি তথা হত্যাকারীর মৃত্যুও হবে কুফরের উপর, এতে সে যত বড় আবিদই হোক না বাহ্যিক দৃষ্টিতে।
উক্ত ফাতওয়ার আলোকে মুছলিমরা কি করবেন এইসব হত্যাকারীদের ব্যপারে? মুহব্বত নাকি ফাতওয়া মেনে ঈমানের হেফাজত?
وَاللهُ
أعْلَمُ بِالصَّوَابِ
مُحَمَّد رَجِيبْ خَوَاجَهْ
شَيْخُنَا
وَ مُرْشِدِنَا إِمَامُ الطّٰرِيْقَةِ الْرَاج
٢/٠٧/١٤٤٦